ভারত জুড়ে এনআরসি কার্যকরের কোনও সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি

ভারত জুড়ে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি চালু করার কোনও পরিকল্পনা নেই কেন্দ্রের, এমনটাই লোকসভায় লিখিত আকারে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এনপিআর কি দেশজুড়ে হতে চলেছে,প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই লোকসভায় লিখিতভাবে জানিয়েছেন, জাতীয় স্তরে এনপিআর তৈরি করার কোনও সিদ্ধান্ত এখনও পর্যন্ত নেয়নি সরকার।

Villagers check their names in the published final list of National Register of Citizens (NRC) at NRC office in Morigaon, Assam, India

Villagers check their names in the published final list of National Register of Citizens (NRC) at NRC office in Morigaon, Assam, India Source: EPA

NRC in India
ভারতের এনআরসি নিয়ে অমিত শাহ এবং মমতা ব্যানার্জী বিতর্কে জড়িয়েছেন Source: Debajyoti Chakraborty/NurPhoto via Getty Images
ভারত জুড়ে এনপিআর চালু হলে তার মডেল কী হবে, এই প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এই প্রশ্নই আসে না।সোমবার সংসদে উঠেছে আজাদি স্লোগান৷ এত দিন যে স্লোগান শোনা যাচ্ছিল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, এ বার তা শোনা গিয়েছে লোকসভার ভিতরে, সৌজন্যে কংগ্রেস৷ লোকসভার প্রশ্নোত্তর পর্বে সিএএ-এনআরসি-এনপিআরের বিরুদ্ধে ওয়েলে নেমে প্রতিবাদ দেখিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদরা৷ তাঁদের হাতে ছিল সিএএ, এনপিআর বিরোধী প্ল্যাকার্ড৷ লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা সংসদের মর্যাদা রক্ষার আবেদন করলেও স্লোগান থামাননি কংগ্রেস সাংসদরা৷ সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে বা সংসদে যে এই ধরনের কোনও আজাদি চাওয়া হয়নি, স্পষ্ট করেছে কংগ্রেস৷ কংগ্রেসের বক্তব্য,সরকার-বিরোধী আন্দোলনে যেমন খিদের জ্বালা, বেকারত্ব এবং হিংসা থেকে আজাদি চাওয়া হয়েছে, তেমন সিএএ-এনপিআর-এনআরসির বিরুদ্ধে আজাদির কথা বলা হচ্ছে ৷

বস্তুতঃ প্রবল চাপে মুখে এনআরসি নিয়ে সংসদে লিখিত বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।কখনও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ,কখনও প্রধান মন্ত্রীর বিবৃতি-এনআরসি কার্যকর করা নিয়ে প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছিল দেশজুড়ে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বয়ানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বয়ানের কোনও মিল পাওয়া যাচ্ছিল না।দিল্লি ভোটের মুখে সেই সমস্যার অবসান ঘটানোর চেষ্ট করেছে সরকার। লোকসভায় সিএএ নিয়ে প্রবল হইহট্টগোল শুরু করে বিরোধীরা।কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী দলের সাংসদের প্রতিবাদে লোকসভার কাজ চালানো দুস্কর হয়ে যায় স্পিকারের পক্ষে। বাধ্য হয়েই সভার কাজ মুলতুবি করে দিতে হয়।স্পিকার বলেন, সিএএ ইস্যুতে খোদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে এনিয়ে বক্তব্য রাখবেন।তার পরেও শান্ত হয়নি বিরোধীরা।প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতিরও দাবি তোলেন তাঁরা। সংসদে দাড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ গত বছর জোর দিয়ে বলে ছিলেন,দেশজুড়েই এনআরসি কার্যকর করা হবে।কিন্তু শীতকালীন অধিবেশনে নাগরিকত্ব আইন পাস হওয়ার পর সিএএ-র পাশাপাশি এনআরসি নিয়েও দেশজুড়ে সরব সাধারণ মানুষ।

দিল্লির শাহিনবাগ,কলকাতার পার্ক সার্কাস,লখনউয়ের ঘণ্টাঘর সহ দেশের একাধিক জায়গায় রাস্তায় নেমেছেন সাধারণ মানুষ।এর মধ্যেই জানুয়ারি মাসে সংসদে অমিত শাহ জানিয়েছেন,দেশজুড়ে এখনই এনআরসি কার্যকর করার পরিকল্পনা নেই সরকারের।গত মাসে রামলীলা ময়দানের এক সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এনআরসি নিয়ে কোনও আলোচনাই হয়নি মন্ত্রিসভায়।ফের তৈরি হয় সমস্যা,এনআরসি নিয়ে ধোঁয়াশা আরও গাঢ় হয়।প্রশ্ন ওঠে, তাহলে সংসদে অমিত শাহ জোর দিয়ে এনআরসি কার্যকর করার কথা বলেছেন কীভাবে।তার পরেই চাপ আরও বাড়তে থাকে কেন্দ্রীয় সরকারের ওপরে।শেষপর্যন্ত লিখিত বিবৃতি দিয়েই এনআরসি সম্পর্কে সরকারের অবস্থা জানাতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার।

এদিকে ,রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের দেখে পশ্চিমবঙ্গে কেউ গো ব্যাক স্লোগান দিচ্ছে না।তাদের খাতির করা হচ্ছে কারণ তারা পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের ভোট ব্যাঙ্ক।কিন্তু প্রধানমন্ত্রী,রাজ্যপালকে গো ব্যাক স্লোগান দেওয়া হচ্ছে।প্রতিবেশী দেশ চায় না,পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য হিসাবে সুরক্ষিত থাকুক।পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জন্য সবচেয়ে বড় বিষয় হল নাগরিকত্ব আইন। প্রতিবেশী দেশে থেকে লাখ লাখ মানুষ নাগরিকত্ব আইনে নাগরিকত্ব পেতে চলেছেন।এরা এতদিন উদ্বাস্তুর তকমা নিয়ে ঘুরতেন।এবার তারা মর্যাদা পাবেন।এই ভাবেই পশ্চিমবঙ্গের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে দরবার করার পর এবার লোকসভাতেও সরব হয়েছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা নিয়ে মঙ্গলবার লোকসভাতে সরব হয়েছেন বিজেপি সাংসদ ও অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়ও।

বিজেপি বরাবরই দাবি করে আসছে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী মুসলিমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভোট ব্যাঙ্ক।এরাই রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসকে টিকিয়ে রেখেছে।সম্প্রতি একাধিক সভায় ওইসব অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে বের করে দেওয়ারও হুমকি দিয়েছে বিজেপি।এদিকে, রাজ্য আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করে একটি স্মারকলিপি তুলে দিয়েছেন রাজ্যের ১৮ বিজেপি সাংসদ। এর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্কুলে সরস্বতী পুজো বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে।অভিযোগ,যে স্কুলে গত ৫০ বছর ধরে পুজো হতো তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।পশ্চিমবঙ্গকে বাংলাদেশ বানানোর চক্রান্ত চলছে।রাজ্যে নারী নির্যাতন অনেকটাই বেড়েছে।আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। সব বিষয়গুলি রাষ্ট্রপতিকে স্মারকলিপি দিয়ে জানানো হয়েছে। সরস্বতী পুজো বন্ধ নিয়ে লোকসভায় সরব হয়েছেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ও।


Share
Published 5 February 2020 1:03pm
By Partha Mukhapadhdhaya
Presented by Abu Arefin

Share this with family and friends


Follow SBS Bangla

Download our apps
SBS Audio
SBS On Demand

Listen to our podcasts
Independent news and stories connecting you to life in Australia and Bangla-speaking Australians.
Ease into the English language and Australian culture. We make learning English convenient, fun and practical.
Get the latest with our exclusive in-language podcasts on your favourite podcast apps.

Watch on SBS
SBS Bangla News

SBS Bangla News

Watch it onDemand