ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলছেন এখনই লকডাউন শেষ করা সম্ভব হবে না

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানিয়ে দিয়েছেন যে, ১৪ এপ্রিল লকডাউন শেষ করা সম্ভব হবে না।লোকসভা এবং রাজ্যসভায় প্রতিনিধিত্ব আছে এমন সব দলের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে মোদি বলেছেন যে তিনি মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে পরামর্শ করবেন অবশ্যই।তবে সম্ভবত লকডাউন এত তাড়াতাড়ি শেষ হতে পারে বলে মনে হয় না।বৈঠক শেষে বিরোধী নেতাদের দাবি, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,করোনাভাইরাস -এর পরে জীবন আর আগের মতো হবে না,হয় তা প্রাক-করোনা এবং উত্তর-করোনো হবে। প্রধানমন্ত্রী নাকি ওই ভিডিও কনফারেন্সে রাজনৈতিক নেতাদের বলেছেন,ব্যাপকভাবে আচরণমূলক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত পরিবর্তন সাধন করতে হবে।

People shop for essentials during India's three-week lockdown

People shop for essentials during India's three-week lockdown Source: AAP

করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই নিয়ে আলোচনা করতেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বুধবার এক বৈঠক ডাকেন।ভারতের রাজনৈতিক দলগুলির সংসদীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রধানমন্ত্রী গোটা দেশে করোনাভাইরাস নিয়ে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন।তাঁদের জানিয়েছেন ঠিক কী অবস্থায় দাঁড়িয়ে রয়েছে দেশ।উল্লেখ্য,১৪ এপ্রিল মধ্যরাতে প্রথম দফার ২১ দিনের লকডাউনের মেয়াদ শেষ হবে।খবর,পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিরোধী নেতাদের স্পষ্ট জানিয়েছেন ,এই পরিস্থিতিতে আদৌ লকডাউন প্রত্যাহার করা সম্ভব নয় এবং তা যুক্তিসঙ্গতও হবে না।

এদিকে করোনাভাইরাস নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে টেলিফোনিক বৈঠকের পর ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি জের বোলসোনারো ভারতের কাছে সাহায্য চেয়ে চিঠি লিখেছেন।প্রধানমন্ত্রীকে লেখা এই চিঠিতে হাইড্রোঅক্সিক্লোরোকুইন চেয়েছেন বোলসোনারো।তবে এই প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেছেন ভারতের প্রাচীন পুরাণ রামায়ণের একটি ঘটনার।হনুমান জয়ন্তীর দিন লেখা এই চিঠিতে হাইড্রোঅক্সিক্লোরোকুইন রফতানি প্রসঙ্গে জের বোলসোনারো বলেছেন,ঠিক যেভাবে প্রভু হনুমান হিমালয় থেকে সঞ্জীবনী বুটি নিয়ে এসেছিলেন শ্রী রামের ভাই লক্ষ্মণের চিকিত্‍সার জন্যে এবং প্রভু যীশু অসুস্থদের চিকিত্‌সা করেছিলেন,দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বার্তিমিউয়ের,তেমনই এই কঠিন সময়ে ভারত ও ব্রাজিল এক হয়ে লড়াই করবে।একে অপরের সঙ্গে আশীর্বাদ এবং ক্ষমতা ভাগ করে নেবে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই জিততে। আর এই সব করতে হবে মানুষের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে।ভারত আগেই জানিয়েছে, প্রয়োজনে অন্য দেশে হাইড্রোঅক্সিক্লোরোকুইন এবং প্যারাসিটামল রফতানি করা হবে। অগ্রাধিকার দেওয়া হবে সেই সব দেশকে যারা ইতিমধ্যে অর্ডার দিয়েছেন।তবে এই সবই করা হবে দেশের মানুষের জন্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত রাখার পর।

লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হবে, নাকি ১৪ এপ্রিলই ওই অবস্থার সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শনিবারই বৈঠক করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে তাঁর দ্বিতীয় বৈঠক করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী। ওই দিনই লকডাউনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে কেন্দ্রীয় সরকার।২৫ মার্চ থেকে ২১ দিনের জন্যে টানা লকডাউন চলছে দেশ জুড়ে।এই অচলাবস্থায় মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের কর্মসংস্কৃতি, ফলে ধুঁকছে অর্থনীতিও। অথচ করোনা (সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত রুখতে এই লকডাউন করা আবশ্যিকও ছিল। দেশের বেশিরভাগ মানুষের ঘরবন্দি দশার মধ্যেও ওই মারণ ভাইরাসের সংক্রমণের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।ফলে এই পরিস্থিতিতে লকডাউন তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া কতটা ঠিক হবে সে বিষয়েই রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদের পরামর্শ চান নরেন্দ্র মোদি।অন্যদিকে,সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আরও চার সপ্তাহ বন্ধ থাকা উচিত এবং ধর্মীয় সমাবেশে নিষেধাজ্ঞাও এই একই সময়ের জন্য বাড়ানো উচিত, এমনই প্রস্তাব দিয়েছেন কেন্দ্রের মন্ত্রী গোষ্ঠী।খবর,ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী লকডাউন একেবারেই উঠে যাবে না,বরং ধাপে ধাপে তোলা হবে নিষেধাজ্ঞা।বলা হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি শপিংমলগুলিকেও কমপক্ষে আরও ৪ সপ্তাহ কাজ শুরু করতে দেওয়া উচিত নয়।

এর মধ্যে বুধবার লোকসভা এবং রাজ্যসভার দলীয় ফ্লোর লিডারদের সঙ্গে বুধবার ভিডিয়ো কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।সেখানে করোনা ভাইরাসের পুরো পরিস্থিতি আরও একবার পর্যালোচনা করা হয়েছে, খতিয়ে দেখা হয়েছে দেশের বিভিন্ন রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি, তার পরে সিদ্ধান্ত।আর সে জন্যই এ বিষয়ে দেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি কী ভাবছে, তা জানার চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, বুধবারের সর্বদল বৈঠকে৷ অন্যদিকে,সারা দেশে চলছে লকডাউন, লোকের রুজি রোজগার বন্ধ, এর মধ্যে গরিব লোকজন কিভাবে সাড়ে চার হাজার টাকা দিয়ে করোনা পরীক্ষা করাবে, প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র সমালোচনা করেছে সুপ্রিম কোর্ট।

এদিকে এক লাফে দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে প্রায় ৮০০।মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৭৭৩ জন।কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া হিসেবে দেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যাও ছাড়িয়ে গিয়েছে পাঁচ হাজার। অন্য দিকে উদ্বেগ বাড়ছে মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়েও।মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৩৫ জনের।মোট মৃতের সংখ্যা ১৪৯। শুধু মহারাষ্ট্রেই মৃত্যু হয়েছে ৬৪ জনের। মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাত,দু রাজ্যেই মৃত্যু হয়েছে ১৩ জন করে।পশ্চিমবঙ্গে মৃতের সংখ্যা ৫। অন্য দিকে রাজ্যের হিসেবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত মহারাষ্ট্র।সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছে।এই প্রথম দেশের কোনও রাজ্যে এক হাজারের বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেন।দ্বিতীয় স্থানে তামিলনাড়ু, আক্রান্তের সংখ্যা ৬৯০।দিল্লিতে আক্রান্ত ৫৭৬ জন।অন্যদিকে, কলকাতার এনআরএস হাসপাতালের যে ৩৯ জন চিকিৎসককে কোয়ারানটিনে পাঠানো হয়েছিল, তাঁদের বড় অংশই আপাতত সংক্রমণ মুক্ত বলেই জানা গেছে।কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো ১৬ জন নার্সের দেহেও রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।


Share
Published 8 April 2020 8:45pm
By Partha Mukhapadhdhaya
Presented by Abu Arefin

Share this with family and friends


Follow SBS Bangla

Download our apps
SBS Audio
SBS On Demand

Listen to our podcasts
Independent news and stories connecting you to life in Australia and Bangla-speaking Australians.
Ease into the English language and Australian culture. We make learning English convenient, fun and practical.
Get the latest with our exclusive in-language podcasts on your favourite podcast apps.

Watch on SBS
SBS Bangla News

SBS Bangla News

Watch it onDemand