“সিফাত ছিল খুবই শান্ত-শিষ্ট এবং চমৎকার একটা ছেলে”

344876908_185563494404409_2858222334447286953_n.jpg

নর্দার্ন টেরিটোরির চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইশফাকুর রহমান সিফাতের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ডারউইনে বাংলাদেশী কমিউনিটি-সহ সর্বস্তরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। Credit: Bangladeshi Student Association - Charles Darwin University/Facebook

নর্দার্ন টেরিটোরির চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইশফাকুর রহমান সিফাতের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় ডারউইনে বাংলাদেশী কমিউনিটি-সহ সর্বস্তরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।


মাস্টার্স অফ ইনফরমেশন সায়েন্সের ছাত্র সিফাতকে গত ৩ মে, ২০২৩, বুধবার ভোরবেলায় তার ফ্লাটের বিছানায় রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরদিন ৪ মে, বৃহস্পতিবার তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

এই ঘটনায় অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে নর্দার্ন টেরিটোরি পুলিস।

সিফাতের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনায় ডারউইনের বাংলাদেশী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত ব্যথিত এবং ক্ষুব্ধ হন।

চার্লস ডারউইন ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশী স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ইমরান আহমদ সজীব বলেন,

“বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা খুবই মর্মাহত হয়েছেন। সাথে তারা ক্ষুব্ধ।”
ইসলামিক কাউন্সিল অফ নর্দার্ন টেরিটোরির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ নর্দার্ন টেরিটোরির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য চৌধুরী মোহাম্মদ সদর উদ্দিন বলেন,

“শুধুমাত্র বাংলাদেশী কমিউনিটি নয়, সর্বোপরি ডারউইনের সমস্ত কমিউনিটির মধ্যেই এটা নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে।”

ডারউইনে বসবাসরত বাংলাদেশী কমিউনিটি এই ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়ে। সিফাত বাস করতেন মিলনার সাবার্বে। তার পাশের সাবার্বের দিলশানা পারুল বলেন,

“নর্দার্ন টেরিটোরিতে, মানে ডারউইনে আসলে আমরা বাংলাদেশী কমিউনিটি অনেক ছোট কমিউনিটি তো, খুব বড় কমিউনিটি না। কাজেই এখানে একটা ঘটনা ঘটলে নিজেদের কমিউনিটির মধ্যে খুব দ্রুত আসলে এটা ছড়িয়ে পড়ে। স্বভাবতভাবেই আসলে নিজেদের কমিউনিটির মাঝে এ রকম একটা (ঘটনা) ফেস করা, এটার জন্য তো কেউই রেডি ছিলাম না।”

ইমরান আহমদ সজীব বর্তমানে বাংলাদেশী প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া, ডারউইনের বাংলোদেশী কমিউনিটির নানা উদ্যোগ ও আয়োজনে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়ে থাকেন। তিনি বলেন, সিফাত যখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন, তখন ডারউইনের বাংলাদেশী কমিউনিটির সদস্যরা তার খোঁজ নিতে হাসপাতালে ভীড় জমান।

“সেই ঘটনার পর পরই, সেদিন সন্ধ্যায় আমরা একটা কমিউনিটি মিটিং ডাকি যেখানে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ নর্দার্ন টেরিটোরি এবং বাংলাদেশী স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশী অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন, সবাই উপস্থিত ছিলেন। সাথে আরও আমাদের বাংলাদেশী সিনিয়র কমিউনিটির মেম্বাররাও ছিলেন। তাদের সাথে আমরা আলোচনা করেছি। এই আলোচনা এবং পরামর্শের কারণে সিফাতকে হাসপাতালে দেখতে আসা লোকদের সংখ্যা কমে যায়।”
সিফাতের এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনায় কমিউনিটির পক্ষ থেকে সাড়া প্রদান, ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের ইতিবাচক ভূমিকা, এসব নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন চৌধুরী মোহাম্মদ সদর উদ্দিন।

চৌধুরী মোহাম্মদ সদর উদ্দিন নিজেও প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছেন। তার সম্পর্কে ইমরান আহমদ সজীব বলেন,

“উনি অনেক হেল্প করেছেন। (সিফাতের) পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন।”

চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ইতিবাচক ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র তাশরীফ মাহমুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের খোঁজ রাখছেন এবং নানাভাবে সহায়তা করছেন।

সিফাতের মৃতদেহ বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। তবে, এর আগে ডারউইনে তার প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।
সিডনি থেকে সিফাতের নিকট আত্মীয়রা ডারউইনে আসেন। তাদের যাতায়াত খরচ বহন করেছে চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়, বলেন মোহাম্মদ সদর উদ্দিন।

সিফাতের বাবা-মাকে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসারও প্রচেষ্টা চালানো হয়, তবে নানা কারণে সেটি আর সম্ভব হয় নি।

ডারউইনের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ইমরান আহমদ সজীব বলেন,

“ডারউইন কখনই এ রকম ছিল না, যা আমরা দেখছি লাস্ট ছয় মাস। গত তিন মাসে তো চারটা খুন হলো এবং ক্রাইম রেট আমাদের ডারউইনে অনেকে বেড়ে গেছে।”

১৯৯৯ সালে সিডনি থেকে ডারউইনে আসেন চৌধুরী মোহাম্মদ সদর উদ্দিন। ডারউইনের বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, বিগত ২৩ বছরে তিনি এ রকম অবস্থা দেখেন নি।

ডারউইনে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপরে এই ঘটনার কী রকম প্রভাব পড়েছে, সে বিষয়ে ইমরান আহমদ সজীব বলেন,

“সিফাতের ঘটনার পর পর প্রায় এক সপ্তাহ আমি দেখেছি যারা সিফাতের এটা নিয়ে কাজ করেছেন আমাদের সাথে, তারা খুবই খুবই ভয়ে ভীত ছিলেন। তারা অনেকেই একা ঘুমাতে পারেন নি। তারা অ্যাজ এ গ্রুপ হিসেবে একজন ফ্রেন্ড আরেকজন ফ্রেন্ডের বাসায় গিয়ে ঘুমিয়েছেন।”
345039908_1200328200539331_8265126145496405939_n.jpg
চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ইতিবাচক ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র তাশরীফ মাহমুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের খোঁজ রাখছেন এবং নানাভাবে সহায়তা করছেন। Credit: Bangladeshi Student Association - Charles Darwin University/Facebook
সিফাত কেমন ছেলে ছিল?

সিফাতের মৃতদেহ ধোয়ানোর সময়ে সেখানে ছিলেন চৌধুরী সদর উদ্দিন। এর আগে, সিফাতের সঙ্গে তার কখনও দেখা হয় নি। তবে, অন্যদের মাধ্যমে তিনি সিফাত সম্পর্কে যতটুকু জেনেছেন, সে সম্পর্কে তিনি বলেন,

“সে খুব প্রাণোচ্ছ্বল ছেলে ছিল। ক্রিকেট খেলতে পছন্দ করতো, ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে পছন্দ করতো। তার ফ্লাটমেট আমাকে বলেছে যে, তার মতো এত ভাল ছেলে সে আর কখনই দেখে নি।”

আর, ইমরান আহমদ সজীব বলেন,

“সিফাতের সাথে আমার দেখা হয়েছিল খুবই কম। আমি যেটা জেনেছি, সিফাত খুবই কোয়াইট এবং নাইস পার্সন ছিল। সে মেধাবী ছাত্র ছিল।”

সজীব আরও বলেন, “এ রকম মৃত্যু যাতে কারও না হয়, এটাই আমাদের সবার কাম্য আল্লাহর কাছে।”

প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা অডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share
Follow SBS Bangla

Download our apps
SBS Audio
SBS On Demand

Listen to our podcasts
Independent news and stories connecting you to life in Australia and Bangla-speaking Australians.
Ease into the English language and Australian culture. We make learning English convenient, fun and practical.
Get the latest with our exclusive in-language podcasts on your favourite podcast apps.

Watch on SBS
SBS Bangla News

SBS Bangla News

Watch it onDemand