বাড়ীভাড়া সংকটে গৃহহীনতা বাড়ছে - কফস হারবারের বাসিন্দারা গাড়িতে বা তাঁবুতে থাকছেন

Coffs Harbour jetty.

Coffs Harbour, New South Wales, Australia, Australasia Credit: Manfred Gottschalk/Getty Images

করোনাভাইরাস মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে কম ভাড়ার আশায় এবং দূর থেকে কাজের সম্ভাবনার ফলে আরও বেশি অস্ট্রেলিয়ান শহর ছেড়ে রিজিওনাল এলাকায় চলে গেছে। এখন চাহিদা বেড়ে গিয়ে বাড়ীভাড়া স্থানীয় বাসিন্দাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। নিউ সাউথ ওয়েলসের মধ্য-উত্তর উপকূলের কফস হারবারে কিছু লোক গাড়ি, তাঁবু, শেড এবং ক্যারাভানে বাস করছে, কারণ তারা সাশ্রয়ী মূল্যে আবাসন পাচ্ছে না।


রিপোর্ট অনুযায়ী, নিম্ন-আয়ের এবং কর্মহীন লোকেরা সোশ্যাল হাউজিংয়ের জন্য এক দশক ধরে দীর্ঘ অপেক্ষার সম্মুখীন হন।

অনেক লোক তাদের গ্রীষ্মের ছুটি কাটাতে কফস হারবারে দীর্ঘকাল ধরে ভিড় করেছে।

কিন্তু স্বর্গের মতো মনোরম এই ছোট্ট এলাকাটির কিছু বাসিন্দাদের জন্য সেখানে থাকার আর্থিক ক্ষমতা তাদের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

পারিবারিক সহিংসতার শিকার জোয়ান জনস্টন এই ক্রিসমাসে তার গাড়িতে কাটিয়েছেন। তিনি এবং তার চার বছরের ছেলেকে নিয়ে গত দুই বছর ধরে এভাবেই বসবাস করছেন।

জোয়ানের একটি চাকরি আছে এবং বিজ্ঞাপন অনুযায়ী ভাড়াও পরিশোধ করতে পারেন।

কিন্তু বাড়ী ভাড়া পেতে তাকে তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। প্রায় ৩০০ আবেদন করেও তিনি বাড়ী পাননি।

সারা দেশে খালি বাড়ীর হার কম। মধ্য উত্তর উপকূলে, এই হার ০.৮ শতাংশে নেমে গেছে।

নোলান পার্টনারস রিয়েল এস্টেটের এজেন্ট স্কট নোলান বলেন, সাশ্রয়ী মূল্যের হাউজিং মার্কেটে অবস্থা আরও খারাপ।

স্থানীয় অ্যাডভোকেসি গ্রুপ - হাউজিং ম্যাটারস অ্যাকশন গ্রুপের এমা বেলচার বলেন যে আবাসন সংকট এখন গৃহহীনতার সংকটে পরিণত হয়েছে।
Homeless man sleeping in the street
Homeless man sleeping in the street ( Image representational). Source: Press Association / AAP
মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে স্টেট ও টেরিটরিগুলোতে বাড়ী ভাড়া বেড়েছে।

কিন্তু কফস হারবারে এই বৃদ্ধি আরো প্রবল হয়েছে - মধ্যম ভাড়ার হার গত তিন বছরে ৩০ শতাংশ বেড়েছে যা স্টেটের গড় থেকে দ্বিগুণেরও বেশি।

কফস হারবারে ভাড়াটিয়ারা গড়ে এখন প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫২০ ডলার করে ভাড়া দিচ্ছে।

স্থানীয় ভাড়াটে এলিজাবেথ পার্নেল বলেন, আমরা প্রতি সপ্তাহে ৫০০ ডলার করে ভাড়া দিচ্ছি যা আমার প্রতি পাক্ষিক মজুরির তিন চতুর্থাংশ।

এর আগেও একবার গৃহহীন হয়েছিলেন এলিজাবেথ পার্নেল।

তিনি, তার স্বামী এবং তাদের নয় বছর বয়সী কন্যা একটি ক্যারাভেনে চার সপ্তাহ কাটিয়েছেন।

এই বছরের শুরুতে তারা আবার গৃহহীন হওয়ার শংকায় ছিলেন, এর মাত্র চার দিন আগে একটি ইউনিট খুঁজে পান তারা।

এই ছুটির সময়ে এলিজাবেথ আবার ভাড়া খুজবেন। নতুন বছরে তাদের ইজারার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে হয়তো তাদের অন্য কোথাও যেতে হবে।

কফস হারবার থেকে প্রায় আধঘণ্টার ড্রাইভে নদীর ধারে একটি ছোট ক্লিয়ারিং হাউজে এলোইস ব্রুকারস তার ক্যারাভেনে থাকেন।
একটি স্থানীয় দাতব্য সংস্থা এলোইসকে ক্লিনার হিসেবে কিছু কাজ পেতে সাহায্য করেছিল।

কিন্তু তার মজুরি এই অঞ্চলের ভাড়া বৃদ্ধির হারের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য যথেষ্ট নয়।

কফস হারবারে ২০২০ সালের শুরু থেকে এ পর্যন্ত বাড়ী ভাড়া ৩০ শতাংশ বেড়েছে - এটি সিডনির ভাড়া বৃদ্ধির হারের দ্বিগুণেরও বেশি।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্য থেকে দেখা গেছে অন্তত ৫৭ জন মানুষ গৃহহীন অবস্থায় আছে।

সমুদ্র সৈকতে সারিবদ্ধ তাঁবু, গাড়ি এবং ক্যারাভেনগুলো ভিন্ন কথা বলে।

পিটস প্লেস-এর কেস ওয়ার্কার স্টেসি রাউ বলেন, আমরা প্রতিদিন প্রায় ১০০ জন লোককে (আবাসন সহায়তার জন্য) দেখতে পাই।

পিটস প্লেস হল একমাত্র কেন্দ্র যেখানে শহরের গৃহহীনরা খাবার, বাথরুম এবং লন্ড্রির মতো পরিষেবা পেতে পারে।

এতে কর্মজীবী গৃহহীনদের জন্যও সংকট তৈরি হয়েছে। অনেকের স্থায়ী কাজ থাকা সত্ত্বেও - স্থিতিশীল আবাসন পাচ্ছে না।

কফস হারবার কাউন্সিলর টনি জাজ বলেন, "আমরা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছি যেখানে আমরা আর এই সংখ্যা দেখে অবাক হই না, তবে এই লোকদের যে ব্যক্তিগত পরিস্থিতি তা দেখে আপনাকে হতবাক হতে হবে।"

বর্তমানে কফস হারবারে আবাসনের জন্য অপেক্ষমাণ তালিকায় ৭৩০ জনেরও বেশি লোক রয়েছে।

এই সংখ্যা খুব বেশি মনে হয় না, তবে যে সীমিত সুবিধা আছে এজন্য অপেক্ষার সময় এখন ১০ বছরেরও বেশি হয়ে গেছে।

মার্টি ওয়ার্ড বলেন, অপেক্ষার সময় এতই দীর্ঘ যে এখন তালিকায় নতুন কাউকে যুক্ত করারও মানে নেই।

মার্টি কফস ক্রিকের তীরে তাঁবু গেড়েছেন। আগে একাই থাকতেন, কিন্তু এখন আর এক নন।

যেমনটি দাঁড়িয়েছে - শহরে এখন এক রাত্রির জন্যও কোন আশ্রয় নেই।

হোমলেসনেস এডভোকেট ডরিস কাওয়ান এটি পরিবর্তন করার চেষ্টা করছেন।

ব্রিসবেনের অনুরূপ মডেলের উপর ভিত্তি করে তিনি কাউন্সিলকে একটি স্থানীয় গাড়ি পার্ককে একটি অস্থায়ী (পপ-আপ) আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত করার প্রস্তাব করেছিলেন।

তবে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে।

হোপ ফর দ্য হোমলেস-এর অ্যাডভোকেট ডিন ইভার্স আশঙ্কা করছেন যে এই আবাসন সংকট সমাধানে যদি ব্যবস্থা না করা হয়, তবে এটি একটি স্বাস্থ্য সংকটে পরিণত হবে।

প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার  সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share
Follow SBS Bangla

Download our apps
SBS Audio
SBS On Demand

Listen to our podcasts
Independent news and stories connecting you to life in Australia and Bangla-speaking Australians.
Ease into the English language and Australian culture. We make learning English convenient, fun and practical.
Get the latest with our exclusive in-language podcasts on your favourite podcast apps.

Watch on SBS
SBS Bangla News

SBS Bangla News

Watch it onDemand