আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ঈদ: “ফ্রেন্ডসরাই এখানে ফ্যামিলি”

Abu Hasnat.jpeg

হোবার্টে বাংলাদেশী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ঈদ উদযাপন। Credit: Abu Hasnat Mahfuz

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা কীভাবে ঈদ উদযাপন করেন? এ নিয়ে এসবিএস বাংলার সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন কয়েকজন বাংলাদেশী আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী।


এক মাস সিয়াম সাধনার পর চাঁদ দেখা সাপেক্ষে গত ২১ এবং ২২ এপ্রিল ২০২৩ মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব উদযাপিত হয়।

পরিবার-পরিজন ছেড়ে কীভাবে ঈদ উদযাপন করেন এদেশে বসবাসরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা?
ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডেলেইড-এ অর্থনীতিতে পিএইচডি করছেন রুবাইয়াৎ সরওয়ার। ২০২০ সালে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন তিনি। এদেশে ঈদ উদযাপন সম্পর্কে তিনি বলেন,

“অ্যাডেলেইডে বেশ ক'টি ঈদের অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ হয়েছে আমার। ঈদের আগের দিন থেকেই উদযাপন শুরু করি আমরা। ঈদ উপলক্ষে রান্না করি- টক- মিষ্টি- ঝাল। বন্ধু, সুহৃদ ও আপনজনদের কারো কারো বাড়িতে যাই। খাওয়া দাওয়া- আড্ডায় মেতে উঠি। দেশী সাজ পোশাকে ঈদের দিনটাকে রাঙাতেও ভুল হয় না।”

বাংলাদেশের ঈদের সঙ্গে এখানকার ঈদ উদযাপনের তুলনা করে তিনি বলেন,

“বাংলাদেশে অতি আপনজন এবং পরিবারের সান্নিধ্য হল ঈদের মূল আকর্ষণ। দূর দেশে বসে এখানে এই বিষয়টি আমি খুব মিস করি। মায়ের হাতের খাবার মিস করি।”

তার মতে,

“এখানে একটা প্রচণ্ড আনন্দের ব্যাপার ঘটে ঈদে। সেটা হল ঈদের দিন সকাল থেকেই নারী-পুরুষ - শিশু- সকলের ঘোরাঘুরি। বাংলাদেশে মহিলারা ঈদের আগের দিন ব্যস্ত থাকেন রান্না করে, ঈদের দিন ততোধিক ব্যস্ত থাকেন অতিথিদের জন্য অপেক্ষায় থেকে আর তারা বাড়ি এলে খাবার পরিবেশন করে। দিনশেষে বাংগালী নারী নুইয়ে পড়েন থালাবাসন- হাড়িকুড়ি পরিষ্কার করে।”
Rubaiyat.jpeg
পিএইচডি শিক্ষার্থী রুবাইয়াৎ সরওয়ার (ডান দিক থেকে প্রথম) বলেন, “অস্ট্রেলিয়ায় আসার আগে আমি কখনোই জানতাম না, এদেশে নারীরাও ঈদ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেন ঈদের দিনেই।” Credit: Rubayat Sarwar
ইউনিভার্সিটি অব টাসম্যানিয়ার শিক্ষার্থী আবু হাসনাত মাহফুজ বাংলাদেশ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন ২০২০ সালে। তিনি বলেন,

“২০২০ সাল থেকেই আমি হোবার্টে রয়েছি। তখন থেকে এটা আমার সপ্তম ঈদ। আলহামদুলিল্লাহ, ভালভাবে আমার ঈদগুলো কেটেছে।”

হোবার্টের বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রশংসা করে তিনি বলেন,

“এখানে অনেক বড় ভাই আছেন, যারা আসলে ব্যাচেলরদেরকে ইনভাইট করেন ঈদের দিনে। আর, ব্রেকফাস্ট এবং লাঞ্চের জন্য তো আলহামদুলিল্লাহ, আমরা অনেক বেশি ভাগ্যবান যে, আমাদের আশে-পাশে এতগুলো মানুষ রয়েছেন যাদের বাসায় আমরা যেতে পারি, ঈদের সময়ে।”

ঈদের দিনে অনেকের কাজ থাকে। তখন ছুটি নিয়ে নামাজে যেতে হয়, বলেন মাহফুজ।

“ঈদের পুরোটা দিন কিন্তু আসলে অনেক ব্যস্ততার মাঝে দিয়ে যায়। আমাদের অনেকের কাজের শিফট থাকে এবং কাজের শিফটের ফাকে আসলে একটা ব্রেক নিয়ে আমরা নামাজের জন্য আসি।”

এছাড়া, ঈদের দিনটিতে নানা রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করার কথা বলেন তিনি।
WhatsApp Image 2023-04-24 at 2.07.24 PM.jpeg
জাছিয়া তুনাজ্জিনা (ডান থেকে দ্বিতীয়) বলেন, “ঈদ বলতে মেইনলি আমরা বুঝি ফ্যামিলির সঙ্গে টাইম কাটানো। ফ্রেন্ডসরা এখানে ফ্যামিলি।” Credit: Jasia Tunazzina
ইউটিএস এর বিজনেস অ্যানালিটিক্স-এ মাস্টার্স করছেন বাংলাদেশের জাছিয়া তুনাজ্জিনা। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন। এদেশে এটাই তার প্রথম ঈদ। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

“ঈদের দিন আমি মূলত আমার কাজিনের বাসাতেই ছিলাম।”

বাংলাদেশের সঙ্গে এখানকার ঈদ উদযাপনের তুলনা করতে বললে জাছিয়া বলেন,

“ঈদ বলতে মেইনলি আমরা বুঝি ফ্যামিলির সঙ্গে টাইম কাটানো। ফ্রেন্ডসরা এখানে ফ্যামিলি।”

তার মতে, অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশী কমিউনিটির ইউনিটি অনেক বেশি।
ইউটিএস-এ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছেন মাশিয়াত তাসনিম হক। সিডনিতে এটা ছিল তার দ্বিতীয় ঈদ। তিনি বলেন,

“আমি আমার খালার পরিবারের সাথেই থাকি,তাই এখানেও ঈদের দিন বাংলাদেশের মত খাওয়া, আনন্দ, বন্ধু, প্রতিবেশী ও পরিচিত বাঙালিদের বাসায় বেড়াতে যাওয়া, দাওয়াত খাওয়ার আনন্দগুলো পেয়ে যাই।”

“তবে মা, বাবা আর ছোট বোনকে অসম্ভব মিস করি, নানুর বাসার ঈদের মজাদার খাওয়া আর সবাই একসাথে হওয়া, ঈদের সালামী নিয়ে আনন্দ করা খুবই মিস করি।”

সেজন্য তিনি সিডনিতে ঈদের বিভিন্ন আয়োজনে অংশ নিয়ে থাকেন।

“তাই সিডনিতেও আমি খালা আর কাজিনদের নিয়ে ঈদমেলা, চাঁদ রাতের আয়োজনগুলোতে যাই, ইউনিভার্সিটির বাংলাদেশী কমিউনিটির চাঁদ রাত আয়োজনের ব্যবস্থা করেছিল, ওখানে মেহেদী লাগিয়ে দিয়ে আমি খুব আনন্দ অনুভব করেছি এবং সবার আনন্দ দেখে মনে হচ্ছিল এই দূর দেশে পরিবার থেকে দূরে এরা সবাই আরেক পরিবার।”
Mashiat.jpeg
বাংলাদেশ থেকে ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনি-তে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে এসেছেন মাশিয়াত তাসনিম হক (ডানে)। সিডনিতে এটা ছিল তার দ্বিতীয় ঈদ। Credit: Mashiaat Tasnim Haque
টাসম্যানিয়া বাংলাদেশী স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট এইচ এম ফজলে রাব্বি বলেন,

“বাংলাদেশে ঈদের আগে থেকেই সবার একটা বড় ছুটির পরিকল্পনা থাকে। ঈদের একটা আমেজ থাকে। এখানে দেখা যায়, অনেকের ঈদের দিনে কোনো কাজ পড়ে যায়।”

আর, বাংলাদেশের ঈদের সঙ্গে তুলনা করে মাহফুজ বলেন,

“বাংলাদেশের সঙ্গে এখানকার ঈদ উদযাপনের যদি তুলনা করি তবে সবচেয়ে বড় পার্থক্যটা গড়ে দেয় আসলে পরিবার-পরিজন ও বন্ধু-বান্ধব।”

“এখানে আসলে ঈদের সময়টুকুতে পরিবার-পরিজন ছাড়া ঈদ করাটা, এই আনন্দটা কিছুটা হলেও ফিকে মনে হয়।”

অস্ট্রেলিয়ার বহু-সাংস্কৃতিক দিকটির কথা উল্লেখ করে মাহফুজ বলেন,

“তবে, হোবার্ট একটি মাল্টি-কালচারাল শহর এবং এখানের এনভায়রনমেন্টটা মাল্টি-কালচারাল। আমাদের এখানে যে সুযোগটা থাকে সেটা হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের মুসলিমদের সাথে মেলামেশা করার এবং যারা স্টুডেন্ট এখানে পড়াশোনা করতে আসে, তাদের সাথে নিজেদের কালচারটা আসলে তুলে ধরার।”

“এই তুলে ধরার মাধ্যমে হয়তো বা আমাদের উৎসবটা আরও বেশি উৎসব-মুখর হয় এবং আমাদের যে খারাপ লাগাটা থাকে, আসলে পরিবার-পরিজন ছেড়ে দূর প্রবাসে ঈদ করা, সেটা কিছুটা হলেও কমে যায়।”

প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা অডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share
Follow SBS Bangla

Download our apps
SBS Audio
SBS On Demand

Listen to our podcasts
Independent news and stories connecting you to life in Australia and Bangla-speaking Australians.
Ease into the English language and Australian culture. We make learning English convenient, fun and practical.
Get the latest with our exclusive in-language podcasts on your favourite podcast apps.

Watch on SBS
SBS Bangla News

SBS Bangla News

Watch it onDemand