পে-ডে ঋণ ও কোভিড-১৯ প্যানডেমিক কি ঋণ-সুনামি নিয়ে আসবে?

Concerned woman with bills

Concerned woman with bills Source: Getty image

অস্ট্রেলিয়ায় ২৯ বছর পর এই প্রথম অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিল। আর্থিক উপদেষ্টাদের পরামর্শ গ্রহণ করছে ঋণ-সমস্যায় নিপতিত মানুষেরা, যারা এর আগে কখনও ঋণ করেন নি। করোনাভাইরাসের এই বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে গুরুতর মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে উদ্বেগ প্রকাশ রয়েছে। কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী এবং ঋণ-সমস্যা নিয়ে প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারের লিংকটিতে ক্লিক করুন।


কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী শুরু হওয়ার আগেও হাজার হাজার মানুষকে আর্থিক বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন ন্যাশনাল ডেট হেল্পলাইনের ফাইন্যান্সিয়াল কাউন্সেলর সারাহ ব্রাউশ-শ। তবে, এই বৈশ্বিক মহামারীর ফলে যা ঘটছে, তার কোনো নজির তিনি এর আগে দেখেন নি।

প্রায় ৩০ বছর পর অস্ট্রেলিয়ায় অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিল। এই মন্দার আগে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা সাধারণত কাজ করতেন। এখন তারা তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। যেমন, খাবারের সমস্যা।

কনজ্যুমার পলিসি রিসার্চ সেন্টারের প্রকাশিত সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্তে দেখা যায়, তরুণ বয়সী অস্ট্রেলিয়ানদের মধ্যে প্রতি ১০ জনে ৭ জনই তাদের আর্থিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

অভাবী লোকদেরকে মাইক্রো-ফাইন্যান্স পণ্য ও পরিষেবার যোগান দেয় অস্ট্রেলিয়ায় সুদীর্ঘকাল ধরে চলা অন্যতম দাতব্য প্রতিষ্ঠান গুড শেফার্ড। এর ইকোনমিক ওয়েলবিয়িং এবং এন্টারপ্রাইজেস-এর জেনারেল ম্যানেজার মেগান ম্যাক’আল্পাইন বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে বহু অস্থায়ী অভিবাসী যোগাযোগ করেছেন। তারা সরকারের বিভিন্ন আর্থিক-সহায়তা প্রকল্প থেকে বাদ পড়েছেন।

তার পর্যবেক্ষণে সাম্প্রতিক কনুজ্যুমার ডাটাই প্রতিফলিত হয়েছে। এতে দেখা গেছে, জুলাই মাসে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ানরা তিন গুণেরও বেশি বার পে-ডে লেন্ডারের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে কিংবা কনজ্যুমার লিজ গ্রহণ করে থাকে। তারা তাদের প্রয়োজন মেটাতে ব্যক্তিগতভাবে দ্বিগুণ সংখ্যায় ঋণ গ্রহণ করে থাকে।

ব্রাউন-শ বলেন, যাদের খুব সামান্য উপার্জন কিংবা কোনো আয়ই নেই, তারা ঋণ পেতে সংগ্রাম করেন। এ রকম পরিস্থিতিতে তার মতো আর্থিক উপদেষ্টারা সহায়তা করে থাকেন।

ব্রাউন-শ বলেন, মরিয়া অবস্থায় যারা অনিশ্চিত ঋণ-দাতাদের কাছ থেকে খুব দ্রুত ঋণ গ্রহণ করতে চান, তখনই এ রকম অবস্থা হয়। এদেশে নবাগতরা প্রায় সময়েই জানেন না যে, কোন কোন নিরাপদ স্থান থেকে ঋণ গ্রহণ করতে হয়, যেখানে এর ফি এত চড়া ও উচ্চহারের নয়।

ন্যাশনাল ডেট হেল্পলাইনের অংশ হলো দ্য ফাইন্যান্সিয়াল রাইটস লিগাল সেন্টার। আর্থিক চাপে থাকা ব্যক্তিদেরকে তারা বিনামূল্যে আইনী পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

মরিয়া অবস্থায় মানুষ বেপরোয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে। সিনিয়র সলিসিটর জেন লিউইস এ সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করেন যে, তারা যেন কোনো অবস্থাতেই পে-ডে ঋণ গ্রহণ না করেন।

অন্যান্য লোন-প্রডাক্ট সম্পর্কেও সতর্ক করেন ব্রাউন-শ। যেমন, আফটার পে এবং বাই-নাউ-পে-লেটার স্কিমগুলো। এগুলোর মাধ্যমে মানুষ সহজেই একাধিক চুক্তিতে আবদ্ধ হতে পারে।

ম্যাক’আল্পাইন বলেন, আরেকটি ঝুঁকিপূর্ণ লোন-প্রডাক্ট, যা এড়িয়ে চলতে হবে, তা হলো রেন্ট-টু-বাই স্কিমগুলো। এগুলোর বিজ্ঞাপনগুলো দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত হওয়া পণ্যগুলোর জন্য কস্ট-অ্যাফেক্টিভ উপায়ে প্রচার করা হয়।

ডেট কনসোলিডেটিংয়ের বিষয়টি শুনতে ভাল মনে হলেও এ সম্পর্কে লিউইস সবাইকে সতর্ক করে বলেন, এ কাজ করার আগে ন্যাশনাল ডেট হেল্পলাইনে যোগাযোগ করে অবশ্যই আর্থিক পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।

বাই-নাউ-পে-লেটার স্কিম থেকে ভিন্ন রকম হলেও পে-ডে লোনগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় ন্যাশনাল কনজ্যুমার ক্রেডিট প্রটেকশন অ্যাক্ট দ্বারা।

জেন লিউইস বলেন, ফাইন্যান্সিয়াল রাইটস লিগাল সেন্টার সহায়তা করতে পারে ভোক্তাদেরকে তাদের ঋণ-সংক্রান্ত মতবিরোধগুলো নিরসনে। যদি তারা মনে করে যে, তারা যে ঋণ গ্রহণ করেছেন তা তারা প্রথম পর্যায়ে পরিশোধ করতে সমর্থ হবেন না কিংবা সেই ঋণ যদি ঋণ-গ্রহীতার আসল প্রয়োজন এবং উদ্দেশ্যগুলো পূরণ না করে।

মেগান ম্যাক’আল্পাইন বলেন, যারা আর্থিক সংগ্রামে লিপ্ত রয়েছেন, এ রকম অস্থায়ী অভিবাসীদেরকে মাইক্রো-ফাইন্যান্সিংয়ের বিভিন্ন অপশন বা বিকল্প প্রদানের পাশাপাশি গুড শেফার্ড কোনো সুদ এবং ফি ছাড়াই ঋণ প্রদান করে।

অস্ট্রেলিয়া সরকার এবং ন্যাশনাল অস্ট্রেলিয়া ব্যাংক-এর অর্থায়নে হাউজহোল্ড রিলিফ লোনও প্রদান করে থাকে গুড শেফার্ড।এই ঋণ দেওয়া হয় তাদেরকে যারা কোভিড-১৯ এর কারণে কাজ হারিয়েছেন।

আর্থিক চাপের কারণে মানসিক সমস্যায় নিপতিত হয়ে অনেকেই বিয়ন্ড ব্লু-এর মেন্টাল হেলথ প্রফেশনালদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
বিয়ন্ড ব্লু-র শীর্ষস্থানীয় ক্লিনিকাল অ্যাডভাইজার ড. গ্রান্ট ব্লাশকি বলেন, সাম্প্রতিক একটি জরিপে দেখা গেছে, ৮৩ শতাংশ ফাইন্যান্সিয়াল কাউন্সেলর রিপোর্ট করেছেন যে, তাদের অন্তত অর্ধেক সংখ্যক ক্লায়েন্ট আর্থিক চাপের কারণে কোনো না কোনো ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।

ড. ব্লাশকি মনে করেন, ভাল মানসিক স্বাস্থ্য থাকলে মানুষ করোনাভাইরাসের এই বৈশ্বিক মহামারীর সময়ে সৃষ্ট সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হতে পারবেন এবং একজন শক্তিশালী চাকুরি-প্রার্থী হিসেবে নিজেকে তৈরি করতে পারবেন।

ড. ব্লাশকি বলেন, কোনো কোনো দেশে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক আলোচনাকে মানুষ ট্যাবু বা অস্বস্তিকর বিষয় বলে মনে করে থাকেন। অস্ট্রেলিয়ানরা এই বিষয়ে অনেক উদার ও খোলামেলা। গবেষণায় দেখা যায়, প্রায় অর্ধেক সংখ্যক অস্ট্রেলিয়ান জীবনের কোনো না কোনো সময়ে মানসিক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন।

ন্যাশনাল ডেট হেল্পলাইন যে-সব ফাইন্যান্সিয়াল কাউন্সেলের উপরে জরিপ চালিয়েছে, তাদের প্রায় সবাই জানিয়েছেন যে, আর্থিক বিষয়ে পরামর্শ করার পর মানুষের মানসিক চাপ কমে যায় কিংবা তারা বেশি আশাবাদী হয়।

মেগান আল্পাইন মনে করেন, কোভিড-১৯ এর আগে এবং অর্থনৈতিক মন্দার আগে যারা ক্রেডিট-ভিত্তিক জীবনযাপন করতেন, যারা আর্থিক সংগ্রামে থাকতেন, তাদের উপরে ইতোমধ্যে একটি ডেট সুনামি আঘাত করেছে।

ক্রেডিট ইন্ডাস্ট্রির কারণে ঋণ-গ্রহীতারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সহজেই ঋণ গ্রহণ করতে পারছেন। এই ক্রেডিট ইন্ডাস্ট্রির সমালোচনা করেন তিনি। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ঋণগুলো, যেমন, আফটার পে এর উদাহরণ দেন তিনি। এটি সম্পর্কে কয়েক বছর আগেও মানুষ তেমন কিছু জানতো না। কিন্তু এখন প্রায় সমস্ত রিটেইল আউটলেটগুলোতেই এটি পাওয়া যায়।

ঋণ পরিশোধের কিস্তি যখন সরাসরি ব্যাংক থেকে কাটা হতে থাকে তখন সেসব ঋণ-গ্রহীতাদের কাছ থেকে ফোন কল পান লিউইস। তারা বলেন যে, মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে তাদের ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ফুরিয়ে যাচ্ছে।

ব্রাউন-শ বলেন, আর্থিক উপদেষ্টারা উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ঋণগুলো নিয়ে অনেক উদ্বিগ্ন।

ব্রাউন-শ বলেন, যারা কোনো দিন আর্থিক সমস্যায় পড়েন নি তাদের জন্য ন্যাশনাল ডেট হেল্পলাইনে প্রথম ফোন-কলটি করাটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। আর্থিক সঙ্কটে পড়া ব্যক্তিদেরকে তিনি অনুরোধ করেন এই হেল্পলাইনে কল করতে। এটা ফ্রি এবং এর পরামর্শ সেবায় গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়।

আপনি যদি মানসিক চাপে থাকেন এবং আপনার যদি আবেগ-বিষয়ক সহায়তার প্রয়োজন হয়, তাহলে বিয়ন্ড ব্লু-র সঙ্গে যোগাযোগ করুন 1300 22 4636 নম্বরে কিংবা লাইফলাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করুন 13 11 14 নম্বরে।

বিনামূল্যে গোপনীয় আর্থিক এবং আইনী পরামর্শের জন্য ন্যাশনাল ডেট হেল্পলাইনে কল করুন 1800 007 007 নম্বরে।

আরও তথ্যের জন্য কিংবা গুড শেফার্ডের সুদ-বিহীন, ফি-বিহীন ঋণের জন্য তাদের ওয়েবসাইট দেখুন কিংবা কল করুন 1300 121 130 নম্বরে।

আপনার পছন্দের সার্ভিস প্রভাইডারের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে দোভাষীর সাহায্য নিতে কল করুন ট্রানস্লেটিং অ্যান্ড ইন্টারপ্রিটিং সার্বিসে 13 14 50 নম্বরে।


Share
Follow SBS Bangla

Download our apps
SBS Audio
SBS On Demand

Listen to our podcasts
Independent news and stories connecting you to life in Australia and Bangla-speaking Australians.
Ease into the English language and Australian culture. We make learning English convenient, fun and practical.
Get the latest with our exclusive in-language podcasts on your favourite podcast apps.

Watch on SBS
SBS Bangla News

SBS Bangla News

Watch it onDemand