শিল্পী আখতার জাহানের মুক্তিযুদ্ধকালীন অভিজ্ঞতা: স্টুডিওতে বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! সেই লোকের পাশে গান করছি

Singer Akhter Jahan

রবীন্দ্র-সঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত, অতুল প্রসাদের গান, গজল, পল্লী গীতি ও আধুনিক গানে পারদর্শিতা রয়েছে আখতার জাহানের (বাম থেকে তৃতীয়)। Credit: Akhter Jahan

দীর্ঘ পাঁচ দশক ধরে অ্যাডিলেইডে বসবাস করছেন সঙ্গীত-শিল্পী আখতার জাহান। ১৯৬০ এর দশকের দিকে ঢাকা রেডিও এবং টেলিভিশনে নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করতেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ায় আসার পর সাইকোলজিস্ট হিসেবে কাজ করলেও সঙ্গীত-চর্চা চালিয়ে গেছেন। সঙ্গীত-শিল্পী আখতার জাহান কথা বলেছেন এসবিএস বাংলার সঙ্গে।


আখতার জাহানের দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে সঙ্গীত-শিল্পী হয়ে ওঠার ইতিহাস, তার ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং অস্ট্রেলিয়ায় অভিবাসনের নানা দিক।

ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পর্যন্ত বিভিন্ন দিকগুলো। দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ আজাদ রহমান এবং রবীন্দ্র-সঙ্গীত শিল্পী সনজীদা খাতুনের সঙ্গে কাজের কিছু স্মৃতিচারণ, ছায়ানটে গান শেখানো, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে রেডিও এবং টেলিভিশনে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা এবং ১৯৭১ সালেই পুনরায় অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসার মতো বিষয়গুলো।
Akhter Jahan.jpeg
অস্ট্রেলিয়ায় আসার পরও সঙ্গীত-চর্চা চালিয়ে যান আখতার জাহান। অ্যাডিলেইডে নানা সময়ে বেশ ক’টি ব্যান্ডও গড়ে তোলেন তিনি। তার প্রথম ব্যান্ডের নাম ছিল ‘আখতার জাহান অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’। আরও দু’টি ব্যান্ডের নাম হলো, ‘আখতার জাহান অ্যান্ড গ্রুপ’ এবং ‘সুর জাহান’। Credit: Akhter Jahan
আখতার জাহান প্রায় সব ধরনের গান করতেন বলেন। রবীন্দ্র-সঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত, অতুল প্রসাদের গান, গজল, পল্লী গীতি ও আধুনিক গানে তার পারদর্শিতা রয়েছে। তিনি বলেন,

“আমি ছোটবেলা থেকে রবীন্দ্র-সঙ্গীতে খুব পারদর্শী ছিলাম।”

১৯৭০ সালে আখতার জাহানের স্বামী আবু তাহা হাফিজুর রহমান অস্ট্রেলিয়া থেকে ঢাকায় ফিরে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার শিক্ষকতা চালিয়ে যান।

ঢাকায় ফিরে আখতার জাহান সাইকোলজিতে মাস্টার্স করেন। এর আগে তিনি অবশ্য ফিলোসফিতে মাস্টার্স করেছেন। এরপর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান না করেই, বিভাগীয় প্রধানের অনুরোধে, ক্লাস নেওয়া শুরু করেন।
এরপর, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। এ সম্পর্কে তিনি বলেন,

“(১৯৭১ সালে) আর্মি ক্র্যাকডাউনের কয়েক মাস পরে বললো যে, সবাই যার যার কাজে ফিরে যাও। রিটার্ন টু ডিউটি। আমার ইউনিভার্সিটিতে ফিরে যেতে হয় নি। কিন্তু, গানের ডিউটি দিতে যেতে হলো। রেডিও এবং টেলিভিশনে গানের ডিউটি দিতে যেতে হলো।”

“ক্রাকডাউনের আগে আমরা তো ‘সংগ্রাম চলবেই, চলবেই, চলবেই’, হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে টেলিভিশনে প্রোগ্রাম করেছিলাম, আজাদ রহমান সাহেবের তত্ত্বাবধানে।”

“যাই-হোক, আমি গান গাইতে ফিরে গেলাম। কিন্তু, সোলজার দাঁড়িয়ে থাকতো (টিভি স্টুডিওর) গেটে। ঢুকার সময়ে এরা হাতে হাত লাগাতো। খুব ভয় করতো।”

“ভেতরে যাওয়ার পরে, স্টুডিওতে বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে! সেই লোকের পাশে গান করছি। আমার বান্ধবীরা পরে বলতো, টেলিভিশনে দেখে বলতো, তোর চেহারা দেখে মনে হয় খুব ভয়। আমি বলতাম, বন্দুক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওদিকে। ভয় হবে না তো কী?”
আখতার জাহান তখন সর্দি-কাশীর বাহানা দিয়ে রেডিও এবং টেলিভিশনে গানের প্রস্তাবগুলো ফিরিয়ে দিতে লাগলেন। কিন্তু, দীর্ঘদিন ধরে সেটা করা গেল না। তখন তিনি নিরাপত্তার খাতিরে ব্যাংককে চলে যান।

তখন অস্ট্রেলিয়া থেকে তার স্বামীর পিএইচডি সুপারভাইজর প্রফেসর জ্যাক স্মার্ট তাদেরকে অ্যাডিলেইডে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন।

তিন মাস ব্যাংককে থাকার পর তারা ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে সিডনি হয়ে অ্যাডিলেইডে চলে আসেন।

“১৯৬৭ সালে প্রথম যখন এসেছিলাম, তখন (অ্যাডিলেইডে) বাংলাদেশী কেউ ছিল না। পশ্চিমবঙ্গের এক ভদ্রলোক, উনি এখনও আছেন, ড. আশফাক আহমেদ, উনি অনকোলজিস্ট, উনার স্ত্রী অস্ট্রেলিয়ান, উনারা খালি ছিলেন।”

“তারপর, পরেরবার যখন ফিরে আসলাম, তখনও খালি উনারাই ছিলেন। তখনও বাংলাদেশী কেউ ছিল না।”

“আস্তে আস্তে দেখা হলো, যে স্কুলে আমাদের ছেলে যাচ্ছিল, তার মাধ্যমে এক ইনডিয়ান ফ্যামিলির সঙ্গে দেখা হলো। সেখানে দু’টি মেয়ে, পশ্চিম বাংলার, ছিল, সূতপা এবং সিঞ্জিনী মুখার্জী। ওদের বাবা ড. মুখার্জী তবলা বাজাতেন।”

এভাবে, আরও পশ্চিম-বাঙালী পরিবারের সঙ্গে পরিচয় হয়, বলেন আখতার জাহান।
অস্ট্রেলিয়ায় আসার পরও আখতার জাহান সঙ্গীত-চর্চা চালিয়ে যান। অ্যাডিলেইডে নানা সময়ে বেশ ক’টি ব্যান্ডও গড়ে তোলেন তিনি। তার প্রথম ব্যান্ডের নাম ছিল আখতার জাহান অ্যান্ড ফ্রেন্ডস। এর পরে তিনি আরেকটি ব্যান্ড করেন আখতার জাহান অ্যান্ড গ্রুপ। আর, পরেরটির নাম সুর জাহান।

সঙ্গীত-শিল্পী আখতার জাহান রহমানের সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় পর্বটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।





এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা রেডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৭ টা পর্যন্ত। রেডিও অনুষ্ঠান পরেও শুনতে পারবেন, ভিজিট করুন: 

আমাদেরকে অনুসরণ করুন 

Share
Follow SBS Bangla

Download our apps
SBS Audio
SBS On Demand

Listen to our podcasts
Independent news and stories connecting you to life in Australia and Bangla-speaking Australians.
Ease into the English language and Australian culture. We make learning English convenient, fun and practical.
Get the latest with our exclusive in-language podcasts on your favourite podcast apps.

Watch on SBS
SBS Bangla News

SBS Bangla News

Watch it onDemand