অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা: বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের যা জানতে হবে

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অস্ট্রেলিয়ার আন্তর্জাতিক শিক্ষাখাতকে ঢেলে সাজাতে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। অস্ট্রেলিয়াতে পড়তে আসতে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা অনেকেই প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাবে দ্বিধায় পড়েন। পাথওয়ে এডুকেশন সার্ভিসের ডিরেক্টর মিঃ ওমর নাফিজ কোভিড ১৯-এর প্রাদুর্ভাব পরবর্তী সময়ে অস্ট্রেলিয়াতে সম্প্রতি যেসব স্টুডেন্ট ভিসা সম্পর্কিত নীতি ও আইনগুলিতে পরিবর্তন এসেছে সে বিষয়ে আলোকপাত করেছেন।

International students

Quarantine capacity could delay Australia’s ability to bring international students to Australia soon. Source: Getty Images

মিঃ ওমর নাফিজ এসবিএস বাংলায় আপনাকে স্বাগতম 

- ধন্যবাদ 

সম্প্রতি স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে বেশকিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে, এই পরিবর্তনগুলো কি এবং এতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা কিভাবে উপকৃত হবে?

- কোভিড ১৯  প্রাদুর্ভাব  পরবর্তী সময়ে  এক্ষেত্রে বেশ কিছু  পরিবর্তন এসেছে।  

প্রথমত সরকার অস্ট্রেলিয়ার বাইরে নিবন্ধিত সকল স্থানে শিক্ষার্থী ভিসা প্রদান পুনরায় শুরু করেছে এবং স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার পর বর্ডার ওপেন না হওয়া পর্যন্ত  স্টুডেন্টসরা তাদের পড়াশোনা অনলাইন এ চালিয়ে যেতে পারবে। 

দ্বিতীয়ত অস্ট্রেলিয়ান সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অনলাইন পড়াশোনা করার সুযোগ দিয়েছ। এবং এই অনলাইন স্টাডি ২ বছর  অস্ট্রেলিয়ান স্টাডির বাধ্যবাধকতার অংশ হিসেবে গণনা করা হবে।  আন্তর্জাতিক বর্ডার পুনরায় খোলা হলে শিক্ষার্থীরা এদেশে এসে বাকি পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে এবং তারা সকলেই ৪৮৫ গ্রাজুয়েট ভিসা এপলাই করতে পারবে। 

তৃতীয়ত ভিসা গ্রহণের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ান সরকার আবেদনকারীদের অতিরিক্ত সময় প্রদান করছে।  

চতুর্থত আবেদনকারীদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফলাফল জমাদান এবং ইংরেজি ভাষা পরীক্ষার ফলাফল জমাদানের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সময় দেয়া হচ্ছে এবং ইংরেজি ভাষা পরীক্ষার মানদণ্ড হিসেবে পিয়ারসন টেস্ট অফ ইংলিশ (PTE), IELTS, TOEFL এবং Home Based পরীক্ষার রেজাল্ট গ্রহণ করা হচ্ছে।  আজকাল ঘরে বসেই TOEFL এবং Home Based ইংলিশ পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ রয়েছে। 

পঞ্চমত আন্তর্জাতিক ছাত্ররা কোভিড -১৯ এর কারণে যদি তাদের মূল ভিসার মেয়াদের মধ্যে পড়াশোনা শেষ করতে না পারে তবে তারা আর বিনা খরচে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন জমা দিতে সক্ষম হবে। সেক্ষেত্রে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অনুমোদন এবং ১৫৪৫ ফর্ম (কোভিড ১৯ দ্বারা সম্পর্কিত) পূরণ করে ভিসা আবেদন করতে হবে।  অস্ট্রেলিয়ার ভেতরে ও বাহিরে অবস্থানরত শিক্ষার্থীরা উভয়েই এই সুবিধা পাবেন। 

ষষ্ঠত সরকার COVID-19 মহামারীতে স্বাস্থ্য, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী পরিচর্যা খাতে কর্মরত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য কাজের সীমাবদ্ধতা 20 ঘন্টা/ সপ্তাহ থেকে 40 ঘন্টা/ সপ্তাহ করে দিয়েছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা চালিয়ে যেতে অক্ষম শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনা পিছিয়ে দিতে পারবে। ডেফারাল তাদের ভিসার বৈধতাকে প্রভাবিত করবে না।
Omar Nafiz
Omar Nafiz Source: Omar Nafiz
আমরা জানতে পেরেছি কভিড ১৯ পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যাতায়াত বাধাগ্রস্ত হয়েছে, বর্তমানে পরিস্থিতির কি উন্নতি হয়েছে, শিক্ষার্থীরা কি আসতে পারছে ?

- এ বছর দ্বিতীয় সেমিস্টার শুরুর জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকার যে পরিকল্পনা নিয়েছিল সেখানে এই পরিকল্পনাগুলি ভিক্টোরিয়ায় কোভিড -১৯ এর দ্বিতীয় প্রাদুর্ভাবের ফলে স্থগিত করা হয়েছে । তবে অস্ট্রেলিয়ার বাহিরে থাকা অবস্থাতেই স্টুডেন্ট ভিসা অনুমোদন করা হচ্ছে এবং অনলাইন স্টাডি অব্যাহত আছে। আশা করা যাচ্ছে যে খুব শিগ্রীই আন্তর্জাতিক বর্ডার খুলে দেয়া হবে। 

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী সাইমন বার্মিংহ্যাম ঘোষণা করেছেন যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার ক্ষেত্রটি পুনরায় চালু করতে পাইলট প্রোগ্রামের অংশ হিসাবে ৩০০ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী অ্যাডিলেডে পৌঁছাবেন।

শিক্ষার্থীদের কি অন-ক্যাম্পাস ক্লাস করতে দেয়া হচ্ছে?

- না, এখন পর্যন্ত সমস্ত অস্ট্রেলিয়াজুড়ে উচ্চ শিক্ষা এবং ভোকেশনাল শিক্ষাব্যবস্থা শুধুমাত্র অনলাইন ক্লাসে এর মাধ্যমে প্রদান করা হচ্ছ। জুলাই সেশন শেষ হওয়া পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। তবে আশা করা যাচ্ছে যে, খুব শীঘ্রই অন ক্যাম্পাস শিক্ষা ব্যবস্থা পুনরায়  স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে, যেহেতু কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা কমে এসেছে। 

বর্তমানে কি কি বিষয় নিয়ে পড়াশোনার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ দেখা যায়? আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য কি কি সুবিধা আছে, যেমন স্কলারশিপ সুবিধা, পড়াশোনার পড় কাজের সুযোগ ইত্যাদি সুবিধা কি কি আছে?  

- বর্তমানে উচ্চশিক্ষার (ব্যাচেলরস/ মাস্টার্স) জন্য জনপ্রিয় কোর্সগুলো হচ্ছে সোশ্যাল ওয়ার্ক, সাইবার সিকিউরিটি, আইটি, ইলেকট্রিকাল এন্ড টেলিকম্যুনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, এগ্রিকালচারাল সাইন্সেস, নার্সিং, কমিউনিটি সার্ভিসেস, ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজনেস  ম্যানেজমেন্ট এন্ড  বিজনেস (ডাটা) এনালিটিক্স, এডুকেশন - আর্লি চাইল্ডহুড টিচিং (প্রি -স্কুল  এন্ড  প্রাইমারি এডুকেশন), মেডিসিন, সাইকোলজি ইত্যাদি। এছাড়া ভোকেশনাল  এডুকেশন  এন্ড  ট্রেনিং  (VET) সেক্টরের জনপ্রিয় কোর্সগুলো হচ্ছে অটোমোটিভ, বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন, ইলেকট্রনিক্স এন্ড ইলেকট্রিকাল, কুকারী, এছাড়া অন্যান্য ভোকেশনাল কোর্স যেমন বিজনেস, মার্কেটিং, ট্যুরিজম, সাপোর্ট এন্ড ফিটনেস, হসপিটালিটি ইত্যাদি।

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ প্রোগ্রাম কি কি আছে?  

- ছাত্র ছাত্রীদের একাডেমিক মেধার ভিত্তিতে ৫০% পর্যন্ত স্কলারশিপ প্রদান করা হয় ব্যাচেলর্স এন্ড মাস্টার্স লেভেলে। তাছাড়া মাস্টার্স বাই  রিসার্চ এবং পিএইচডি স্টুডেন্টদের জন্য ১০০% পর্যন্ত স্কলারশিপ দেয়ার ব্যবস্থা আছে। ইউনিভার্সিটি কোর্স ট্রান্সফার আবেদনকারী স্টুডেন্টরা সর্বোচ্চ ৫০% পর্যন্ত ক্রেডিট পেতে পারে। অস্ট্রেলিয়ান স্টাডি রিকোয়ারমেন্ট পূর্ণ করার ভিত্তিতে ২ থেকে ৪ বছর পর্যন্ত টেম্পোরারি গ্রাজুয়েট ভিসা পেতে পারে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা। এই ভিসাতে তাদের ফুল টাইম কাজ করার বৈধতা থাকে এবং এই সময়ে কাজের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষার্থীরা পার্মানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য পাঁচ পয়েন্ট দাবি করতে পারবে স্কোর বেসড ইন্ডিপেন্ডেন্ট স্কিল মাইগ্রেশন অথবা স্টেট নোমিনেশন স্কিম এর আওতায়। এছাড়া আন্তর্জাতিক ছাত্র ছাত্রীরা অস্ট্রেলিয়ান পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত বেশ কিছু ইন্টার্নশীপ প্রোগ্রাম সম্পন্ন করার সুযোগ পেয়ে থাকে যা তাদেরকে প্রাসঙ্গিক কর্মক্ষেত্রের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত করে তোলে। যেমন প্রফেশনাল ইয়ার প্রোগ্রাম, আবশ্যক শিক্ষানবিশ প্রোগ্রাম এবং জব রেডি প্রোগ্রাম ফর ট্রেড কোর্সস স্টুডেন্টস।

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থী অস্ট্রেলিয়ায় কম আসছে, এর কোন সুনির্দিষ্টকারণ আছে?

- দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ইন্ডিয়াতে স্টুডেন্ট লোন খাতে বেশ বড় বাজেট ধার্য করা হয় প্রতি বছর। একেক স্টেটে একেক স্কিম চালু করে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক শিক্ষা ব্যবস্থার সুযোগ পায় এবং তাদের জন্য সহজ লোনের ব্যবস্থা থাকে। 

এছাড়াও অন্যান্য দেশের মধ্যে যেমন শ্রীলংকার শিক্ষার্থীরা ফাউন্ডেশন কোর্স করে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।  এইরকম কোনো প্রোগ্রাম যদি বাংলাদেশে থাকত তবে শিক্ষার্থীদের জন্যে ভর্তির প্রক্রিয়া খুবই সহজ হতো।  এখানে আরো উল্লেখ যে, শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভুটানের মতন দেশ গুলোতে সরকার এবং NGO প্রতিষ্ঠানগুলোর পৃষ্ঠপোষকতায় অস্ট্রেলিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেমন Monash, Swinburne-সহ আরো কিছু স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এসব দেশে  তাদের শাখা পরিচালনার মাধ্যমে ফাউন্ডেশন প্রোগ্রাম অফার করে। ৬  মাস থেকে ১ বছর নিজ দেশে ফাউন্ডেশন কোর্স কমপ্লিট করার মাধ্যমে ছাত্র ছাত্রীরা সরাসরি অস্ট্রেলিয়ান ইউনিভার্সিটি প্রোগ্রামগুলোতে জয়েন করার সুযোগ পায়, অন্য কোনো এন্ট্রি রিকোয়ারমেন্ট ছাড়াই। 

আরেকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো স্কুলিং প্রোগ্রাম যা আমাদের দেশের জনগণ খুব একটা বৃহৎ পরিসরে অবগত নয়। অস্ট্রেলিয়াতে সিনিয়র সেকেন্ডারি স্টাডিজ (ইয়ার 11 এবং  ইয়ার 12) যা ভিক্টোরিয়াতে "ভিক্টোরিয়ান সার্টিফিকেট অফ এডুকেশন" (VCE), এক্ষেত্রে যদি ভবিষ্যতে অস্ট্রেলিয়াতে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা থাকে তবে আমাদের দেশ থেকে স্কুল লেভেল যেমন এসএসসি পাস করে তারা চাইলে অস্ট্রেলিয়াতে স্কুলিং প্রোগ্রামে জয়েন করতে পারে VCE তে এডমিশনের মাধ্যমে। আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা যদি এখানকার স্কুলিং-এর সাথে পরিচিত থাকে সেক্ষেত্রে তাদের উচ্চশিক্ষার পথটা আরো সুগম হয়। সাধারনত VCE লেভেল স্টুডেন্টদের বয়স ১৮ এর নিম্নে হলে তাদের পিতামাতাকেও সন্তানের দেখাশোনা করার জন্য প্রথম প্রায়োরিটিতে ভিসা প্রদান করা হয় যতদিন না বাচ্চার বয়স ১৮ হয়।  চাইলে এসময়ে অস্ট্রেলিয়াতে থাকা অবস্থায় পিতামাতা পড়াশোনাও করতে পারেন। 

উপরে উল্লেখিত সুযোগ সুবিধাগুলো আমাদের দেশে স্টুডেন্টদের জন্য ব্যাপক পরিসরে এখন পর্যন্ত নেই। তাই পর্যাপ্ত সেমিনার, ওয়ার্কশপস, সামাজিক সচেতনেতা এবং প্রচারেরমাধ্যমে তুলে ধরা যায় তবেই এর জনপ্রিয়তা বাড়বে বলে আশা করা যায়। 

আমাদের দেশে বলতে গেলে বহির্বিশ্বে লেখাপড়ার সম্ভাবনাগুলো তুলে ধরার, শিক্ষা পরামর্শ দেবার মতন কিংবা ট্রেনিং প্রোগ্রাম পরিচালনার মাধ্যমে প্রচারণা কাজ করার মতো খুব একটা ভালো এডুকেশন কন্সালটেন্সি নেই বললেই চলে। 

এখানে আমাদের ডিপার্টমেন্ট অফ ফরেন অ্যাফেয়ারস গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে পারে, অস্ট্রেলিয়ান গভর্নমেন্ট-এর সাথে আন্তরিক সম্পর্ক বাস্তবায়নের মাধ্যমে। দৃষ্টান্তস্বরূপ আমাদের প্রতিবেশী দেশ নেপাল এবং ইন্ডিয়াতে কিছু এনজিও, অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করে শুধুমাত্র তাদের দেশ থেকে শিক্ষার্থীদের সহজে এখানে আনার জন্য।   

বাংলাদেশসহ শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভুটানের স্টুডেন্টদের শুধু মাত্র উচ্চশিক্ষার জন্যই অস্ট্রেলিয়াতে আসতে দেখা যায়, কিন্তু ভোকেশনাল এডুকেশন এন্ড ট্রেনিং (VET) যেমন ডিপ্লোমা, অ্যাডভান্সড ডিপ্লোমা, ট্রেড কোর্সও  যে স্বল্প খরচে পড়তে আসা যায়, ভিসা পাওয়া যায় এ ব্যাপারে মানুষ তেমন অবগত নয়।

সর্বোপরি একথা বলা যায় যে, যদি ক্ষুদ্র থেকে বৃহৎ পরিসরে সামাজিক সচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম চালু করা যায়, তাহলেই অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পড়তে আসার জনপ্রিয়তা বাড়বে আমাদের দেশে।  

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য কোন পরামর্শ আছে কি?

- আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যদি অস্ট্রেলিয়াতে পড়তে আসার পরিকল্পনা থাকে তবে তাদের কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হবে। যেমন প্রথমত, ছাত্র ছাত্রীদের খুব বেশি স্টাডি গ্যাপ না থাকাই শ্রেয়, কেন না সত্যিকার অর্থে এন্ট্রি রিকোয়ারমেন্ট-এর শর্তাবলী মোতাবেক যদি দীর্ঘ সময় শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ার সাথে সম্পৃক্ত না থাকে তারা  স্টুডেন্ট ভিসা পাবার যোগ্যতা রাখে না। 

দ্বিতীয়ত,অস্ট্রেলিয়ান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অধিকাংশই স্কলারশিপ পাবার যোগ্যতা হিসেবে মিনিমাম সিজিপিএ ৬০% অথবা তার অধিক ধার্য করা আছে। সুতরাং, সময়মতো পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী হবার কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া মেরিট স্কলারশিপের উপযোগী হওয়ার জন্য স্টুডেন্টদের ৬৫%-এর  উপর সিজিপিএ থাকা জরুরি।    

শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে যদি প্রথম বিশ্বের দেশে পাড়ি দেবার স্বপ্ন থাকে তবে বেশ আগে থেকেই পিটিই বা আইইএলটিএস অথবা টোফেল পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করা উচিত যাতে করে ব্যাচেলর্স শেষ হওয়া মাত্র সময় নষ্ট না করে ভর্তির এবং ভিসার আবেদন পত্র জমা দানের জন্য প্রস্তুত থাকা যায়। আজকাল ঘরে বসেই টোফেল হোম বেসড ইংলিশ এক্সাম দেয়ার সুযোগ রয়েছে।

আন্তর্জাতিক ছাত্র ছাত্রীদের উচিত তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার সম্পর্কে পর্যাপ্ত বাস্তববাদী হয়ে অনুসন্ধান করা।  যেমন পড়াশোনার জন্য যে বিষয় তারা বেছে নিচ্ছে, চাকরি বাজারে তার পর্যাপ্ত ডিমান্ড আছে কিনা, ক্যারিয়ার গঠনের জন্য ভালো সাবজেক্ট নির্ধারণের ব্যাপারটা খুবই  গুরুত্বপূর্ণ এক্ষেত্রে।   

যার যার পূর্ব দক্ষতা অনুসারে অথবা যে বিষয় নিয়ে পড়ার আগ্রহ আছে এমন সাবজেক্টই নির্ধারণ করা উচিত,  নতুবা পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কোর্স কাররিকুলাম সম্পর্কে পর্যাপ্ত পরিমানে অনুসন্ধান না করে উচ্চতর শিক্ষা শুরু করে ফেলার পর প্রচুর ছাত্রছাত্রী পড়ালেখা শেষ করতে পারেনা অনাগ্রহতার কারণে।  সতর্কতার সাথে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করলে হতাশা এড়িয়ে চলা যায়।

আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো যে, অস্ট্রেলিয়া বা যে দেশেই যাচ্ছেন না কেন, সেখানে পড়ালেখা ও জীবনযাত্রার মানের খরচ সম্পর্কে ধারণা করে নেয়া ভালো আগে থেকেই।  স্বনামধন্য এবং বড় ইউনিভার্সিটিতে পড়া ভালো তবে, যদি সেখানে পড়ালেখা চালিয়ে যাবার জন্য প্রয়োজনীয় খরচের ধারণা না থাকে তবে গ্রাজুয়েশনের আগেই ঝরে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই কোথায় পড়লে সার্থকতার সাথে পড়া শেষ করা যাবে সেটা নিয়েও বাস্তববাদী পরিকল্পনা থাকতে হবে।  

অনেক সময়ই ফিনান্সিয়াল স্পনসরের সাথে ভিসা আবেদনকারীর নিবিড় সম্পর্ক না থাকার কারণে ভিসা রিজেক্ট হতে দেখা যায়।  জেনে রাখা জরুরি যে অস্ট্রেলিয়াতে পড়ালেখা চালিয়ে যাবার জন্য সাধারণত নিজ পরিবারের সদস্যদের স্পনসর হওয়া  জরুরি।

পরিশেষে বলা যায়, আন্তর্জাতিক ভিসা এন্ড মাইগ্রেশন নীতিমালা সম্পর্কিত সঠিক দিক নির্দেশনা অনুসরণ করে চললে সবরকম বাধা বিপত্তি এড়িয়ে আগানো যায়।

ধন্যবাদ মিঃ ওমর নাফিজ, এসবিএস বাংলাকে সময় দেবার জন্য 

- ধন্যবাদ আপনাকেও।  

আরও পড়ুনঃ 

Share
Published 9 October 2020 5:05pm
Updated 9 October 2020 5:43pm
By Shahan Alam
Presented by Shahan Alam

Share this with family and friends


Follow SBS Bangla

Download our apps
SBS Audio
SBS On Demand

Listen to our podcasts
Independent news and stories connecting you to life in Australia and Bangla-speaking Australians.
Ease into the English language and Australian culture. We make learning English convenient, fun and practical.
Get the latest with our exclusive in-language podcasts on your favourite podcast apps.

Watch on SBS
SBS Bangla News

SBS Bangla News

Watch it onDemand