জলবায়ু ঝুঁকি সত্ত্বেও অস্ট্রেলিয়া থেকে কয়লা আমদানি করতে চায় বাংলাদেশ

Coal being unloaded in Bangladesh

Coal being unloaded in Bangladesh. Source: SBS

আর এক সপ্তাহের মাঝে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন। এদিকে, ভারতের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের ক্যানবেরায় নিযুক্ত হাই কমিশনার এসবিএস নিউজকে বলেন, অস্ট্রেলিয়ার কূটনীতিতে দক্ষিণ-এশিয়া হলো কৌশলগত ও অর্থনৈতিক “ব্লাইন্ড স্পট”। অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে কয়েক মিলিয়ন টন কয়লা আমদানি করতে চায় বাংলাদেশ। পরিবেশবিদরা সতর্ক করে বলেন এর ফলে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির লঙ্ঘন হবে এবং কয়েক মিলিয়ন লোক বাস্তুচ্যূত হবে।


অন্ধকারে মোমের আলোয় পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে ঢাকার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী, ১৩ বছর বয়সী লামিয়া আক্তার। তিনি বলেন, এই অঞ্চলে প্রায়ই বিদ্যুৎ চলে যায়। তখন মোমবাতির আলোয় পড়তে হয়। এতে আমার চোখ ব্যথা করে, ঠিকমতো পড়তে পারি না।

১৩ মিলিয়ন বাংলাদেশীর একজন লামিয়া, যারা অন্ধকারের মাঝে বসবাস করে এবং পড়াশোনা করে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি বিকশিত হচ্ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ এমনকি ভারতকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে অনুমাণ করা হচ্ছে। উন্নয়নশীল, মধ্যম-আয়ের এই দেশটির তাই ফসিল ফিউয়েল বা জীবাশ্ম-জ্বালানির খুবই প্রয়োজন।

আগামী দুই দশকে ২৯টি কয়লা-চালিত পাওয়ার স্টেশন বা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। তাই টনকে টন কয়লা আমদানি করা হচ্ছে।

পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে এ রকম প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগের বিরোধিতা করে প্রচার চালায় Market Forces নামের একটি সংগঠন। এর একজিকিউটিভ ডাইরেক্টর Julien Vincent বলেন, অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান কয়লা-চালিত পাওয়ার ফ্লিটের দেড় গুণ এটি। আর বাংলাদেশে বর্তমানে স্থাপিত পাওয়ার ফ্লিটের ৬০ গুণেরও বেশি এটি। তাই, এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ কার্বন বোমা।

ছোট জমিতে ধান, আলু ও টমেটো চাষ করতেন রফিকুল ইসলাম। নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির জন্য এ জমি অধিগ্রহণ করেছে সরকার। তিনি বলেন, এখানে কয়লা-চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি করা হবে শুনে আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। আমরা শুনেছি কয়লার খারাপ প্রভাব রয়েছে। গাছে ফল ধরে না, বাচ্চাদের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়। সেজন্য আমরা কয়লার বিরোধিতা করেছি। কারণ, আমাদের জমি এবং জীবন ধ্বংস হয়ে যাবে।

অস্ট্রেলিয়ার চিত্র অবশ্য ভিন্ন। ক্যানবেরায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার মোহাম্মদ সুফিউর রহমান বলেন, তার দেশে অনেক বড় সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, বার্ষিক আট বিলিয়ন ডলারের বাজার এটি। কারণ, বাংলাদেশে নির্মাণ কাজ বৃদ্ধি পাওয়ায় অস্ট্রেলিয়ার লৌহ-আকরিক এবং তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধি পায়।

জলবায়ু পরিবর্তনের থাবায় ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বিশ্বের সাত নম্বরে থাকা বাংলাদেশের কয়লার চাহিদা দৃশ্যত পূরণ হওয়ার নয়।

২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্র-পৃষ্ঠের উচ্চতা যদি আধা-মিটার বৃদ্ধি পায়, তাহলে বাংলাদেশের ১১ শতাংশ ভূমি ডুবে যাবে এবং ১৫ মিলিয়নেরও বেশি লোক বাস্তুচ্যূত হবে।

কিন্তু সরকার বলছে, তাৎক্ষণিকভাবে অবলম্বন করার মতো কোনো বিকল্প ব্যবস্থা তাদের হাতে নেই।

জুলিয়েন ভিন্সেন্ট বলেন, মোদ্দা কথা হলো, আমরা এক্ষেত্রে অগ্রসর হলে নিরাপদ জলবায়ুকে বিদায় জানাতে হবে।

২০২১ সাল নাগাদ ১০ শতাংশ পুনঃব্যবহারযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, লক্ষ্যমাত্রা আরও বেশি হওয়া প্রয়োজন।

লামিয়ার মতো শিশুদের উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিত করার জন্য কোনো দেশেই নতুন করে কয়লার ব্যবহার নয়।

প্রতিবেদনটি বাংলায় শুনতে উপরের অডিও প্লেয়ারটিতে ক্লিক করুন।

Follow SBS Bangla on .

Share
Follow SBS Bangla

Download our apps
SBS Audio
SBS On Demand

Listen to our podcasts
Independent news and stories connecting you to life in Australia and Bangla-speaking Australians.
Ease into the English language and Australian culture. We make learning English convenient, fun and practical.
Get the latest with our exclusive in-language podcasts on your favourite podcast apps.

Watch on SBS
SBS Bangla News

SBS Bangla News

Watch it onDemand